Hungry Generation Movement

Hungry Generation Movement
হাংরি আন্দোলন

Tuesday, January 27, 2009

হাংরি বুলেটিন ও পত্রিকা থেকে (১৯৬১-১৯৬৫)








কৃত্তিবাস পত্রিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর সম্পাদকীয়
"অনেকেই প্রশ্ন করেছেন বলে আমরা লিখিতভাবে জানাতে বাধ্য হলুম যে হাংরি জেনারেশান নামে কোনো প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলনের কৃত্তিবাসের নাম যুক্ত করতে চাইনি কখনো । 'হাংরি' নামে অভিহিত কোনো কোনো কবি কৃত্তিবাসে লেখেন, বা ভবিষ্যতে আণেকে লিখবেন, কিন্তু অন্যান্য কবিদের মতই ব্যক্তিগতভাবে, কোনো দলের মুখপাত্র হিসাবে নয় । সংঘবদ্ধ সাহিত্যে আমরে আসগহাশীল নই । পরন্তু বাংলাদেশের যে-কোনো কবির প্রতিই কৃত্তিবাসের আহ্বান । হাংরি জেনারেশানের আন্দোলন ভালো কি খারাপ আমরে জানি না । ওই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ বা পরিণাম সম্পর্কে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই । এ-পর্যন্ত ওদের প্রচারিত লিফলেটগুলিতে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তি চোখে পড়েনি । নতুনত্ব-প্রয়াসী সাধারণ রচনা । কিছু-কিছু হাস্যকর বালক ব্যবহারও দেখা গেছে । এ-ছাড়া সাহিত্যসম্পর্কহীন কয়েকটি ক্রিয়াকলাপ বিরক্তি উৎপাদন করে । পিজিন ইংরেজিতে সাহিত্য করার লোভ উনিশশো ষাট সালের পরও বাংলাদেশের একদল যুবক দেখাবেন---আমাদের কাছে কল্পনাতীত ছিল । তবে ওই আন্দোলন যদি কোনোদিন কোনো নতুন সাহিত্যরূপ দেখাতে পারে---আমরা অবশ্যই খুশি হবো ।" (কৃত্তিবাস পত্রিকার দশম সংকলনের সম্পাদকীয় ।)

এবার হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতা পড়ুন
শম্ভূ রক্ষিত (Shambhu Rakshit)
আমি স্বেচ্ছাচারী
এইসব নারকেল পাতার চিরুনিরা, পেছন ফিরলে,এরাও ভয় দেখায় ।
কিছুই, এক মিনিট, কিছুই জানি না সাম্যবাদী পার্লামেন্ট জনশ্রুতি সম্পর্কে বা ।
চণ্ডাল কুকুরদের আতীনাদ আমাকে ঘিরে---এবং আমাকে আলবৎ জানাতে হবে, আলবৎ আমাকে
ডুবতে দিতে হবে, যেতে দিতে হবে যেখানে যেতে চাই না , পায়চারি করতে দিতে হবে ।
আমার গলা পরিষ্কার---আমি স্বেচ্ছাচারী---কাঁচের ফেনার মধ্যে চুল---স্পষ্ট করে কথা বলতে দিতে হবে
আর কথাবার্তায় তেমন যদি না জমাতে পারি সেরেফ
পায়চারি করে ঘুরে বেড়াবো---সমস্ত পৃথিবীর মেঘলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ।
ক্রোধ ও কান্নার পর স্নান সেরে । ঘামের জল ধুয়ে--শুদ্ধভাবে আমি সেলাম আলয়কুম জানিয়ে
পায়চারি করে ঘুরে বেড়াবো ১ থেকে ২ থেকে ৩,৪,৫ গাছের পাতার মতো । রিরংসায় ।
মাটিতে অব্যর্থ ফাঁদ পেতে রেখে । রাস্তায় । ব্রিজের ফ্ল্যাটে । ট্রেনে,
যে কোনো কিশোরীর দেহে । শেষ রাতে---পৃথিবীর মানচিত্র এঁকে, কেবল স্থলভাগের
হু-হু করে জেট প্লেনে আমি যেতে চাই যেখানে যাবো না, এর ভেতর দিয়ে,
ওর ভেতর দিয়ে--আর । হুম । এক ধরনের ছেনি শাবল আমি চাই--
যা কিছুটা অন্যরকম, রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানান্দের নয়--ঠিক
খেলার মাঠে স্টার্টারের পিস্তলের মতো--রেডি--আমি বাঘের মতন লাফিয়ে পড়ব । খবরদার ।
(জেব্রা নং ২ থেকে)

সুবিমল বসাক (Subimal Basak)
হাবিজাবি
আমারে মাইরা ফেলনের এউগা ষড়যন্ত্র হইসে
চারো কোনা দিয়া ফুসফুস আওয়াজ কানে আহে
ছাওয়াগুলান সইরা যায় হুমকে থিক্যা
অরাআমারে এক্কেরে শ্যায করতে সায়
আমি নিজের ডাকাইতে্যা হাতেরে লইয়া সচেত্তন আসি
কেউ আইয়া চ্যারায় দিশায় চ্যাবা কথা কয় না
আমি সুপসাপ থাকি
ভালাসির গুছাইয়া আমি কথা কইতে পারি না
২ কইতে গিয়া সাত হইয়া পড়ে
১৫ সাইলে ৯ আইয়া হাজির হব
ছ্যাব ফেলনের লাইগ্যা বিচড়াইতাসি অহন
আহ, আমার দাঁত মাজনের বুরুশ পাইতাসি না
বিশ্বাস করেন, কেউ একজনা আমার মুহের সকরা খাবার খাইসে ।
(হাংরি বুলেটিন নং ১৮ থেকে)

করুণানিধান মুখোপাধ্যায় (Karunanidhan Mukhopadhyay)
জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে
আজ ভোরে ৬.৪৫ মি. আমার একমাত্র ছেলে আরক মারা গেলো । ব্রংকোনিমোনিয়া । আমি একা ওকে নিয়ে চলে গেলাম নদীর ওপারে । ওপারে বালিয়াড়িতে ।
বসে বসে অনেক কিছু ভাবলাম । তারপর ওর গায়ের সঙ্গে ভারি পাথর বঁধে মাঝগঙ্গায় ফেলে দিলাম । পাথর খঁজতে প্রাব দুঘণ্টা লেগে গেলো ।
বাড়ি ফিরে এসেছি । আমার বৌ ভীষণ কাঁদছে । মানুষের সেন্টিমেন্ট নষ্ট করার মতো আমার কাছে কিছুই নেই ।
আজ দুপুরে অফুরন্ত সময় ছিল ।
আমার জন্ম কাশীতে । বাবা তখন আই.এন.এ.তে নেতাজির গ্রুপে । তারপর পঁচিশ বছর যখন, বাবা আমায় নিয়ে যান রেংগুনে ।
আই.এন.এ. ছেড়ে দিয়ে বাবা পুলিশে চাকরি নেন । রেংগুনে একনাগাড়ে প্রায় ১০ বছর । তারপর সাইরেন, ব্ল্যাক-আউট,
সংবাদপত্রের হেডলাইন, হাসপাতাল । জাহাজে চেপে বর্মা থেকে সোজা খিদিরপুর ।
খিদিরপুর থেকে আবার কাশী ।
জানতে পারলাম বাবা কোনো বার্মিজ মেয়েকে বিয়ে করেছেন । সেই থেকে
সমাজের বিরুদ্ধে, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, নিজের বিরুদ্ধে
লড়াই । লেখা-পড়া হল না । ক্লাস টেনে-এ পৌঁছে বাবার টাকা
বন্ধ হবে গেল । তখন থেকেই আমি নেমে গেলাম ।
হেল্প! হেল্প!! হেল্প!!!
ছোটবেলায় আঁকার ঝঁক ছিল । ক্লাসে ফার্স্টবয় ছিলাম । ছবি আঁকতে গিয়ে
সব তালগোল পাকিয়ে গেল । কাশীতে একটা ঘর ভাড়া করে নিজের স্টুডিয়ো করলাম ।
ছবি দেখে লোকে পাগল বলতে লাগলো । বাড়ির লোকে মা বোন সকলেই পাগল বলে
বাড়ি থেকে বের করে দিলো । আমিই বাড়ির বড় ছেলে ছিলাম ।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে একটা কায়স্থ মেয়ে বিয়ে করলাম ।
অব্রাহমন বলে বাড়িতে ঢুকতে পাই না ।
কেউ নেই । কেউ নেই ।
(জেব্রা নং ২ থেকে)

আলো মিত্র (Alo Mitra)
মাতাল অনুভব
জানি না কিভাবে, অন্ধকার ছঁকে এলে, অসহায়
পাহাড় এক বুকের ভেতর ফঁড়ে ওঠে--স্থবির নিসর্গের
ম্লান হাসি শোনা যায় কখনোসখনো--ফুলে ওঠে
বেলুনের মতো জটিল নিশ্বাস পাঁজরের খাঁজ থেকে চাপা
স্রোত--
রক্তের চাপা অভিমানে ভিড় করে সারিসারি
অন্ধকার ঘিরে ধরে--চেপে ধরে অসহায় পাহাড়--
বিষণ্ণ মৃত্যুর বিষণ্ণ হলুদ চোখ
ডুবে যেতে যেতে
নদীর জলে ১ থোকা ফুল ও পচা শব
আকাশ, মানুষ, মানুষের স্নায়ুতন্ত্রী--উপদ্রুত জীবনের
উদাসীন চুল
হাওয়ায়--হাওয়ায়--
কে যে কোথায় গড়িয়ে যায়, কিভাবে
কোনো এক সকালে ভাটফুলের জঙ্গল দ্যাখে মানুষদানবের
ইস্পাতঋদয়
ভালোবাসার নীল স্রোতের মধ্যে নিজেকে খুলে ফেলে
আমি অনুভব করি
জীবনমাতালের নেশা....
(উন্মার্গ নং ১ ধেকে)

ফালগুনী রায় (Falguni Ray)
ব্যক্তিগত নিঅন
আমি পুরোপুরি প্রতিভাহীন তাই নাকে জিভ ঠেকিয়ে
প্রমাণ করি প্রতিভা
কখনো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে হাঁটতে
হাঁটতে ভাবি--একদিন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাস্তা দিয়ে হঁটেছিলেন
সে রাস্তায় আমি এক অপদার্থ, ফালগুনী রায় হঁটে যাচ্ছি কখনো ত্রামের
সেকেন্ড ক্লাসে উঠে ভাবি--এই ট্রামটাই কি জীবননান্দের
শরীর থৈঁৎলে দিয়েছিল
এইভাবেই আমি চলেছি--চলেছে পৃথিবী সূর্য নক্ষত্র আমার
আমার ভ্রূণমুহূর্তে আরেক মৃত্যু নেমে এসেছিল সৌরসংসারে
আমার এক বন্ধু বারে বসে দূর দেশের দামি মদ খায় প্রায়ই--
সে খুব রেগেমেগে শালা তাড়িখোর গাঁজাখোর বলেছিল
একদিন আমায়
একলব্যের বুড়ো আঙুল কেড়ে নেবার জন্যে
আমি দ্রোণাচার্যকে হত্যাকারী মনে করি--
(উন্মার্গ নং ৩ থেকে )

সুবো আচার্য ( Subo Acharya )
ছদ্মবেশী
বারবার মনে হয় ছদ্মবেশে আছি
যখন আয়নায় দেখি মুখ
কিংবা ঘোর মধ্য-নিশীথে নক্ষত্রের নীচে নক্ষত্রের চেয়ে
আরো একা
রাত্রি তছনছ করে চলে যায় ট্রেন
তৎক্ষণাত মনে হয় এ আমার ছদ্মবেশ
এ আমার ছদ্মবেশ
ছদ্মবেশে আছি-
এ কি দৃষ্টিবিভ্রম ! এ কি তাৎক্ষণিক জেগে ওঠা !
এ কি অজ্ঞানে ভ্রান্তির অনুসরণ ! পাগলামি !
(হাংরি বুলাতিন নং ১৮ থেকে )

প্রদীপ চৌধুরী ( Pradip Choudhuri )
সিদ্ধার্থ
চূড়ান্ত বিস্ফারিত তোমার ভ্রুণ বেআইনিভাবেই আমার হাতের মধ্যে
নেশায় আবার ফাটে । আমিই আমার শিকড় এবং খাদ্য আমিই মাটিপৃথিবীর
নোনাজল, আমিই গাঁজা, আমাকেই খাই, দেখো আমার সবুজ শরীরের মেরুণ হাত-পা,
মেরুণ চোখ, মেরুন তলপেট এবং ফ্যাকাশে লিঙ্গ
হলুদ রক্তস্রোতে কি রকম পৎপৎ শব্দ করে ভালবাসার খিস্তি দিচ্ছে,
নতুন বারুদের গন্ধে ঝিমিয়ে আসছে শরীর, হয়ত জীবন...
( জেব্রা নং ২ থেকে )

উৎপলকুমার বসু (Utpalkumar Basu )
পোপের সমাধি
লাল-হলুদ কাচের জানালার দিকে তাকিয়ে
সেদিন অকস্মাৎ
বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তে আমি
জটিলতাহীন
সূর্যরশ্মির দিকে চোখ মেলে
"পোপের সাম্রাজ্য আর
তাঁর আসুখের
রহস্যময় বীজাণুর স্হিতিস্হাপকতা"
আঙুলে একটি বড়
গ্লোব পৃথিবীর
বর্তুল পরিধি দেখিয়ে
আমি কলকাতায় তোমাকে বলেছিলাম
"পোপের সাম্রাজ্য
আর তাঁর আসুখের রহস্যময় বীজাণুর স্হিতিস্হাপকতা
কতোখানি দেখা যাক"

বীজাণুর সঙ্গে তুমি চাও না কি যুদ্ধ হোক?
অন্তত আমি তা চাইনা
কারণ সে যুদ্ধ যদি থর্মযুদ্ধ না হয় তাহলে
কুরুক্ষেত্রে কার মুখব্যাদানের অন্ধকারা
আমি ছোট পৃথিবীর গ্লোবের প্রতিচ্ছায়া দেখে
হতচকিতের মতো
কৌরবের খেলার পুতুল হব?
আমি কি নিজেই নিজেকে থলির মতো
নাড়া দিয়ে ভেতরের
বীজাণুর, সন্ত্রাসের, সিকি-আধুলির শব্দ,
গড়াগড়ি তোমাকে শোনাবো?
অন্য বহু
পুরুষের মতো এই সাতাশ আটাশ
বছরের ছোট খিন্ন জীবনের কেবলই
ঝিল্লি শিরা অন্ত্রবহুল
ঐকান্তিক শরীরের প্রেমে
বারবার নেমে এসে
আমাদের দ্বিধা হল কেন?
যথার্থ মাতাল, পাপী,
কর্মজ্ঞানী, সাধু ও চোরের সঙ্গে মাখামাখি হল না তেমন ।
নৌকায় বেশীদূর বেড়ানো হল না
ভালবাসা জোরালো হল না-
খালপারে বিবাদ হল না-

পাঠক, এখন,
রোমের চত্বর থেকে
দূর জানালায় চোখ রেখে
দেখা গেল দ্যুতি নিভে যায়
ক্যাথলিক মিশনের কাছে
আমি ভারতের
অপুষ্ট শিশুর জন্য
গুঁঢ়ো দুধ চাইবো আয়াসে
ঊনচল্লিশ পোপের মৃত্যুর পর
কূটজ্ঞানে
চল্লিশ পোপের
জীবাণুমুক্ত আয়ু ফিরে আসে-
এই বোধে ।
কিন্তু আমাদেরো
অন্য বহু পুরুষের মতো
আরো কুঢ়ি, বাইশ বছরের আয়ু বাকি আছে ।
ততদিন বিমান-বন্দরে গিয়ে বসে থাকি
ঊড়োজাহাজের ওঠানামা দেখি
অথবা ছাপার কলে
গিয়ে বলি কবিতাগুলি
ছেপোনা বা
বুড়ো আঙুলের দাগ ছেপোনা বা
ল্যাজের খুরের দাগ
ছেপোনা বা
আমাকে বদল করো
রহস্যের মূল জানালায়
অন্ধকারে
যখন হলুদ নীল ভিন্ন রং
মুছে গিয়ে পোপের সাম্রাজ্য আজ
বীজাণুর মতো ছোট
সংখ্যাহীন, ধূর্ত ও কোমল
মাতব্বর ঈশ্বরের আবির্ভাব হল সদলবলে ।
__________________________________________
VERE PAPA MORTUUS EST
A Hungry Generation Message on the Death of
Pope John XXIII
Text bu Utpalkumar Basu
___________________________________________
(হাংরি বুলেটিন নং ৭ থেকে)

দেবী রায় (Debi Ray)
আমি চুপ করে থাকলে
নখ কাটতে গিয়ে আমার আঙুলে ব্লেড গঁথে যায়
আনেক গভীর
আমি আপেক্ষা করি, রক্তের -- দেখা নেই
দারুন ভয় আমাকে চিৎ করে ফ্যালে, আমি ঢোঁক গিলি
এই ভয় -- বিষম আন্তরঙ্গ কোনো মৃত্যুরই সমান আবিশ্বাস্য
বাস-ট্রাম আমায় বহু সময় গিলে নেয় কোনো কোনো
বন্ধুর ফ্ল্যাতে যেতে
এক পায়ে খাড়া হয়ে কড়া নাড়ি দরোজায় বহুক্ষণ
এক নাগাড়ে
হাত ধরে যায় 'বাড়ি নেই' অপরিচিত বিদেশী স্বরে কেউ বলে ওঠে
অথবা সরব হুক খোলার শব্দে দাড়ি কামানোর পর প্রথম
আয়নায় নিজের মুখ দেখার সময়ে আমি
হুডখোলা - কার
ছুটি, রেড ধরে ফাঁকা রাস্তায়
বন্ধুর স্ত্রী ঠেসে পরিচিত হতে চায় ফ্যাকাশে হেঁসে
দারুণ ক্ষিদেয় আমি অস্হির হয়ে উঠি - দারুণ ক্ষিদেয়
আমি
এখন বাসট্রাম অবগদি খেয়ে ফেলতে পারি - বেথানিয়া থেকে -
আসের সময়ে যিশু অব্দি এম্নি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিল
আমি চুপ করে থাকলে রাস্তার পাথর অব্দি চিৎকার করে
ওঠে
মানুষের মুখের দিকে চেয়ে আমি বুঝি নপুংসক হয়ে জন্মায়
কেউ
মানুষের হাতে রাজনৈতিক নপুংসক হয়েছে
কেউ
কবিতাকে ধর্মের সমান দেখতে চেয়ে
নিজেকে নপুংসক করেছে
(হাংরি বুলেটিন নং ১৩ থেকে)

বিনয় মজুমদার (Binoy Majumdar )
একটি উজ্জ্বল মাছ
একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে
দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ জলে
পুনরায় দুবে গেল - এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে
বেদনার গাঢ় রসে আপক্ব রক্তিম হলো ফল ।

বিপন্ন মরাল ওড়ে, আবিরাম পলায়ন করে,
যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নীচে
রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ;
স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে পাহাড়ে;

সমস্ত জলীয় গান বাষ্পীভূত হয়ে যায়, তবু
এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রমৎস্য তুমি... তুমি...
কিম্বা,দ্যাখ,ইতস্তত অসুস্হ বৃক্ষেরা
পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্হলী
দীর্ঘ দীর্ঘ ক্লান্ত শ্বাসে আলোড়িত করে
তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে
চিরকাল থেকে ভাবে মিলাইবে শ্বাসরোধী কথা ।
(হাংরি বুলেটিন নং ৯ থেকে)

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ( Shakti Chattopadhyay )
শিল্প ও কার্তুজ
দুঃসাহসী কেউ নেই যে ্সে পেচ্ছাব করবে মুখে
জানে কামড়ে দেবো, জানে অঙ্গহানি হলে বুদ্ধদেব
কে পুনর্গঠিত করবে, পাগলা রামকিংকর বেইজ ছাড়া?
জীবনেই একবার শিল্পঅনুরাগিনীর কাছে
ন্যাংটার উদ্বৃত্ত অংশ হাতড়ে বলেছিলুম, কী ভাবো
শিল্পই যথেষ্ট! কেন কার্তুজ লটকানো হল দেহে ?
( হাংরি বুলেটিন নং ১০ থেকে )

শৈলেশ্বর ঘোষ ( Shaileshwar Ghosh )
আমার মুখ বন্ধ করে দাও
আমাকে উৎসাহ দাও প্রচুর উৎসাহ দাও
মানুষের মত যেন আমি দুপায়ের ভেতরে তোমার চলে যেতে পারি
যেন আমি চরিত্রহীন পুরুষের মত অসহ্য ভালবাসা দিয়ে
তোমাকে সুখী করে ফিরে যাই নিজের দঃখের কাছে
আমার জন্মের দিনে জানিনা কার সঙ্গে হয়েছিল কথা
কে কার পিঠে চেপে এসে ১ পয়সায় দেখেছিল মুখ
কি তোমার কষ্ট যে আমাকে মানেনি নিজের ছেলে
সেইভয়ে যে রক্ত সবুজ তাও বিষাক্ত করেছি নিজে
রাত্রে কথা বলেছি একা মানুষ না দেখে
মায়ের চেয়েও বেশী অন্ধকারে যেখানে তার ১ মিনিটের হাসিও ভোলাতে পারেনি
ভোলাতে পারেনি যে মৃত্যুও উদাসীন নয় আমাদের থেকে
আর এও আশ্চর্য; গলা টিপে মারার সময়েও হাত শব্দ করে না
তোমার কাছে আজ আমি উৎসাহ পাব
৫ মিনিটের জন্যও গায়ের জোড় বেড়ে যাবে, আমি জানি
কিন্তু বাধ্যতামূলক জন্মের ফলে ১ জন আমাদের ছাদের উপরে গিয়ে ফাঁকা
১ জন অতিরিক্ত ভার নিয়ে নেমে গেল সিঁড়ির নীচে--
আমার কাছে নয়, আরও দূরে সরে যাও তুমি
বন্দুক বারুদ পড়ে থাক, খালি হাতে শত্রুর দিকে এগোবার উৎসাহ দাও
উৎসাহ দাও যেন আমি তোমারই কাছে নেমে যেতে পারি
তোমার কথামত তোমারই উরু কামড়ে দিই
খুব রেগে গেলে তুমি তো জান কত সহজে আমার মুখ বন্ধ করা চলে
বা শুধু ধমকে দিলেই হয়ত একেবারে দমে যাব !
( জেব্রা নং ২ থেকে)

মলয় রায়চৌধুরী
কামড়


ভারতবর্ষ, স্যার, এরমভাবে আর কদ্দিন চালাবেন, সত্যি, ভাল্লাগে না
ভারতবর্ষ, আপনার জেলের খিচুড়ি খেলুম পুরো এক মাস, মানে তিরিস দিন
সেপ্টেম্বর চৌষট্টি থেকে চাকরি নেই, জানেন ভারবর্ষ, কুড়িটা টাকা হবে আপনার কাছে?
ভারতবর্ষ, ওরা খারাপ, ইঁদুরেও আপনার ধান খেয়ে নিচ্ছে
সুরাবর্দি কন্ট্রোল রুমে আপনাকে কী বলেছিল ভারতবর্ষ?
বলুন না --- আমিও সুখী, মাইরি, আমিও ক্যারিকেচার করতে পারি!
আর কলকাতা এখন নিম রেনেসঁসের ভেতে দিয়ে কোথায় যাচ্ছে জানি না;
ভারতবর্ষ, দুচারটে লেখা ছাপিয়ে দিন না উল্টোরথ দেশ নবকল্লোলে
আমিও মনীষী হয়ে যাই, কিংবা শান্তিনিকেতনে নিয়ে চলুন
সাহিত্যের সেবা করব, ধুতি-পাঞ্জাবি দেবেন এক সেট
আজ বিকেলে চলুন খালাসিটোলায় বঙ্গসংস্কৃতি করি
ভারতবর্ষ, একটা অ্যাটম বোমা তৈরি করছেন না কেন? ফাটালে আকাশটাকে মানায়!
এল এস ডি খাবেন নাকি? দুজনে চিৎ হয়ে রোদ পোয়াব নিমতলায়।
ভারতবর্ষ, এই নিন রুমাল, চশমার কাচ মুছুন
এবারের নির্বাচনে আমায় জিতিয়ে দেবেন, প্লিজ, দাঁড়াব চিল্কা হ্রদ থেকে
কালকের কাগজে আপনার কোন বক্তৃতাটা বেরোচ্ছে ভারতবর্ষ?
আপনাকে দম দেবার চাবিটা ওদের কাছ থেকে আমি কেড়ে নিয়েছি;
ভারতবর্ষ, আপনাকে লেখা প্রেম-পত্রগুলো আমি লুকিয়ে পড়ে ফেলি
আপনি নখ কাটেন না কেন? আপনার চোখের কোলে কালি
আজকাল আর দাঁতে মিসি দেন না কেন?
আপনি খুনের বদলে খুন করেন আর আমরা করলেই যত দোষ
আমাকে বেড়ালের থাবা মনে করবেন না
নিজের হৃৎপিন্ড খেয়ে নিজের সঙ্গে রফা করে নিলে কেমন হয়
ভারতবর্ষ, ধানক্ষেত থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নিন
পৃথিবীর সমস্ত মহৎ গ্রন্থ পাঠিয়ে দিন ভিয়েৎনামে, হোঃ হোঃ
দেখুন যুদ্ধ থেমে যায় কি না
ভারতবর্ষ, সত্যি করে বলুন তো আপনি কী চান।।
(হাংরি বুলেটিন, ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৬)

( এখানে স্পষ্ট করে দিই যে হাংরি আন্দোলন মকদ্দমায় শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁরাও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিন্তু মামলা থেকে বাঁচার জন্য মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এজন্য তাঁরা সরকারের থেকে সাক্ষ্য বাবদ টাকাও পেয়েছিলেন। আরেকটি তথ্য জানাই। শঙ্খ ঘোষ হাংরিদের পক্ষে কোর্টে সাক্ষী হতে রাজি হননি, যদিও দেজ থেকে প্রকাশিত হাংরি সংকলনে একটি কবিতা দিয়েছেন। তিনি কখনও সিপিএম এবং কখনও তৃণমূল । অত্যন্ত সুবিধাবাদী। )

5 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. আরো কিছু তথ্য জানার ও লেখা পড়ার ইচ্ছে রইলো

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. অনেক অনালোচিত কথা, জেনে গেলুম

    ReplyDelete
  5. হাংরির বুলেটিন গুলির অনলাইন সংস্করণ আছে কী?

    ReplyDelete